আদিয়াবাদ গ্রাম তথা আদিয়াবাদ ইউনিয়ন বৃটিশ আমল হতেই শিক্ষা-সংস্কৃতিতে একটি বর্ধিষ্ণু অঞ্চল । উনিশ শতকের প্রথম হতেই এই গ্রামে স্কুল, ডাকঘর ইত্যাদি স্থাপিত হয়েছিল। আদিয়াবাদ তথা এই এলাকার প্রাচীনতম ও স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল ১৯১২ সালে স্থাপিত আদিয়াবাদ ইসলামিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ।
২০১৮ সালে নরসিংদী- ৫ এর সাংসদ ও জননেতা জনাব রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু সাহেবের প্রচেষ্ঠায় শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ হওয়ার দরুন এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে আসন সংখ্যা সীমিত হয়ে পড়ে, যার ফলে এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের একটি বৃহৎ অংশ বিদ্যালয়ে ভর্তির সুবিধা হতে বঞ্চিত হয় । ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে যেখানে প্রায় ৫০০ থেকে ৫৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীর ভর্তির জন্য আবেদন করে, সেখানে প্রতিষ্ঠানটি থেকে নোটিশ দিয়ে বলা হয় যে সরকারি বিধি মোতাবেক ২০১৯ সালে ১৮০ থেকে ২০০ জন ছাত্র- ছাত্রী ভর্তির সুযোগ পাবে। এর ফলে বাকি প্রায় ৩০০ জন ছাত্র- ছাত্রী স্কুলে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে চরম বিপাকে পরে যায়, এমনকি শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হওয়ার উপক্রম হয়। এ অবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকগণ আদিয়াবাদ ইসলামিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রধানের স্মরনাপন্ন হলে তিনি সরকারী নীতিমালার কথা উল্লখে করে র্ভতি করতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং এলাকায় একটি ভাল ও মানসম্মত নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পদক্ষপে নিতে পরামর্শ দেন।
এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ বেশ কয়েকটি আলোচনা সভা করেন। সবশেষে সর্বসম্মতিক্রমে সিন্ধান্ত মোতাবেক, এলাকার সবাই মিলে আদিয়াবাদের কৃতি সন্তান ও বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী জনাব, এ.কে.এম. ফখরুল আলম আরমান সাহেবের নিকট তাদের প্রাণের দাবি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্ভোগ ও সমস্যার কথা তুলে ধরে আধুনিক ও মানসম্মত একটি পাবলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানান । তিনি দেশে বিভিন্ন এলাকায় অনেক মসজিদ, মাদ্রাসা-এতিমখানা ও শিক্ষা প্রতষ্ঠিান প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এবং এখনও রাখছেন তাই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের বিশ্বাস ছিল তাঁর কাছে গেলে এ সংকটময় পরিস্থিতির সুন্দর একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে।
পরর্বতীতে এলাকার সবাই মিলে এম.পি মহোদয়ের নিকট তাদের আকুতি ও জনাব আরমান সাহেবের আশ্বাসের কথা খুলে বললে এম.পি মহোদয় তাৎক্ষনিক জনাব আরমান সাহেবের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন। এম.পি মহোদয় জনাব আরমান সাহেবকে স্বউদ্যোগে নতুন একটি স্কুল নির্মাণের পরার্মশ দেন এবং এই বষিয়ে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন । এম.পি মহোদয়ের আশ্বাস এর পর ২০২০ শিক্ষা র্বষ হতইে স্কুলটির র্কাযক্রম চালুর জন্য স্কুল স্থাপনরে কাজ ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে শুরু হয় ।
বিদ্যালয়টির অবস্থান:
এ.কে.এম. ফখরুল আলম আরমান উচ্চ বিদ্যালয়টির অবস্থান আদিয়াবাদ ইউনিউয়নের মধ্য পাড়ায় নিরিবিলি ও প্রাকৃতিক মনোরম সুন্দর পরিবেশে প্রায় ৬ বিঘা জমির উপর দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শাখার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভবন, আলাদা খেলার মাঠ, বৈদ্যুতিক লাইট ও ফ্যান সহ সুপরিসর শ্রেণি কক্ষ, উন্নতমানের আসবাবপত্র সহ প্রধান শিক্ষক ও সহঃ প্রধান শিক্ষকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কক্ষ, সহকারী শিক্ষক/শিক্ষিকাদের জন্য ২টি মিলনায়তন, অফিস কক্ষ, আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার যাবতীয় উপকরণ, পাঠ্যবই সহ দেশী ও বিদেশী গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের বই সহ সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, বিশুদ্ধ পানির জন্য গভীর নলকূপ এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার থেকে প্রাপ্ত অত্যাধুনিক “শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব”। নামাজের জন্য রয়েছে মসজদি । এ ছাড়াও রয়েছে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য আলাদা আলাদা ওয়াশরুম । এক কথায় বলতে গেলে বিদ্যালয়টির অবকাঠামো ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন।
ইতিমধ্যেই বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন রায়পুরার গণমানুষের নেতা জনাব রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, মিসেস কল্পনা রাজিউদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান ড. মোঃ মনিরুজ্জামান, মীর আশরাফ আলী, উপ-সচিব (বৃত্তি) ঢাকা শিক্ষা র্বোড, ড. মো: আজিজুল হক, উপ-সচিব, মন্ত্রী পরষিদ বিভাগ, গৌতম চন্দ্র মিত্র, জেলা শিক্ষা র্কমর্কতা, নরসিংদী, মো: সামালগীর আলম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, রায়পুরা, কবি ও অধ্যাপক অসীম বিভাকর, অধ্যাপক আহাম্মাদুল কবীর, ড. মশিউর রহমান মৃধা, কবি ও লেখক সাহান সাহাবুদ্দিন, তুষার ভট্রাচার্য্য, সহকারী প্রোগ্রামার আই.সি.টি. অধিদপ্তর, রায়পুরা, রেবেকা সুলতানা, একাডেমিক সুপারভাইজার, রায়পুরা সহ আরও অনেক গুণিজন ও সরকারী র্কমর্কতাবৃন্দ। পরিদর্শন শেষে, তারা তাদের চমৎকার ও মূল্যবান মতামত প্রকাশ করেছেন যা বিদ্যালয়টির পরিদর্শন বইয়ে লিপিবদ্ধ আছে। তাদের মূল্যবান মতামত বিদ্যালয়টিকে আরো সমৃদ্ধ হতে সহায়তা করবে।
উল্লেখ্য যে, এ.কে.এম. ফখরুল আলম আরমান সাহেব ২০১৯ সালে মোট ছয় বিঘা জমির উপর বিদ্যালয়ের অবকাঠামো সম্পূর্ন নিজ অর্থায়নে নির্মাণ করেন এবং ২০২০ সালে সবকিছু বিদ্যালয়ের নামে দান করে দেন। প্রয়োজনীয় জমি, অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়াও বিদ্যালয়টির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-বোনাস এবং স্কুল পরিচালনার সমুদয় ব্যয় তিনি অনুদান হিসেবে দিয়ে আসছেন, যা একটি নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত।
বিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা:
বিদ্যালয়টি দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ও স্বনামধন্য সুযোগ্য প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে, দক্ষ শিক্ষকমন্ডলি দ্বারা ছাত্র/ছাত্রীদের যত্নসহকারে পাঠদান ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। বিদ্যালয়টি নরসিংদী সরকারী কলেজের স্বনামধন্য সাবেক অধ্যক্ষ জনাব, গোলাম মোস্তফা মিয়া স্যারের সরাসরি তত্তাবধানে এবং সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত নির্বাহী কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে।
বর্তমানে বিদ্যায়টিতে (প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী) প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত আছে। ইতিমধ্যেই বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা খেলাধুলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে (কো-কারিকুলাম) অংশ গ্রহন করে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে পুরস্কার অর্জন করেছে । বিদ্যালয়টির শিক্ষার গুনগতমান ইতমিধ্যইে সংশ্লিষ্ট সকল মহলে সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে । যার ফলে বিদ্যালয়ের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা:
তুলনামূলক অল্প খরচে মান-সম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা, দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী দ্বারা পাঠ দান, দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা বেতনে অধ্যায়নের সুযোগ, ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্য সচেতন ও পরিস্কার -পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে পাঠ দান ও নিয়মিত অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা ও সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়। অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব থাকার ফলে ছাত্র -ছাত্রীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি কম্পিউটারের উপর হাতে কলমে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে পারে । এছাড়া গরীব ও মধোবী ছাত্র-ছাত্রীদরে জন্য রয়েছে সরকার প্রদত্ত উপ-বৃত্তরি ব্যবস্থা ।
আশা করছি পরিকল্পনা অনুযায়ী আন্তরিক পরিশ্রম ও সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় খুব শিঘ্রই বিদ্যালয়টি তার নির্দিষ্ট লক্ষে পৌঁছাতে পারবে ইন্শাআল্লাহ ।